আফ্রিকা থেকে যাযাবর শিকারী গোষ্ঠির আকেটি দল সেন্ট্রাল এশিয়ায় গিয়ে সম্মুখীন হয় পর্বত সংকুল এলাকার। প্রায় ৩০ হাজার বছর পুর্বে এদের অনেকে ঘুরতে ঘুরতে পৌছায় ভারতের সিন্ধু নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে এবং সেখানে স্থাপন করে বসতি। এই নরগোষ্টির বিস্তৃতি ছিল লাইবেরীয়া থেকে উপমহাদেশ পর্যন্ত। এরা দেখতে মধ্যম থেকে লম্বাকৃতির ছিল, গায়ের ও চোখের রং ছিল কালো থেকে হালকা বাদামী, এদের মাথা ও মুখাবয় ছিল দীর্ঘ। ধারণা করা হয় প্রায় ১০ হাজার বৎসর পুর্বে (খ্রীস্টপূর্ব ৮৫০০-৭০০০) মধ্যপ্রাচ্যের উর্বর জমিতে বিচরণকারী শিকারজীবি যাযাবরেরা পুরাতন জীবনধারা বাদ দিয়ে চাষাবাদ ও পশুপালন শুরু করে। যাযাবর জীবনযাপন ছেড়ে দিয়ে ঘরবাসী হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রীস (ফোরাত ও দজলা) নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে (বর্তমান ইরাক সহ সিরিয়া ও ইরাণের কিয়দংশ) মেসোপটামিয়ায় ( মেসোপটামিয়া একটি গ্রীক শব্দ। এর শব্দার্থ হচ্ছে ''দুই নদীর মধ্যবর্তীস্থান'') খ্রীস্টপূর্ব প্রায ৪ থেকে ৫ হাজার বৎসর পূর্বে সুমেরীয় সভ্যতা আত্মপ্রকাশ করে। এরা তাদের নগরীতে দালান কোঠা নির্মান সহ পানি ও পয়ঃ নিস্কাশনের ব্যবস্থা করেছিল। তাদের সভ্যতার অবশেষ দেখে অনুমান করা হয় যে তারা ছিল দক্ষ, রুচিবান ও ঐশ্বর্যশালী। মাটির টালির মধ্যে তাদের লিপি কৌশল আবিস্কৃত হয়েছে। তাদের লিপিকে কিউনিফর্ম বলে অভিহিত করা হয়। সুমেরীয়রাই প্রথম লেখার পদ্ধতি আবিস্কার করে। এই নরগোষ্ঠির পূর্বাঞ্চলীয় শাখার ভারতীয় অধিবাসীদের দ্বারা (খ্রীস্টপূর্ব ৩২৫০ থেকে ২৭৫০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত) সিন্ধু নদীর অববাহিকায় সভ্যতার পত্তন হয। মহোঞ্জদারো ও হরপ্পার সভ্যতা এদেরই অবদান। এদেরকে ভাষার ভিত্তিতে দ্রাবিড় জাতি বলে আখ্যায়িত করা হয়। দ্রাবিড় জাতির পত্তনকৃত এই সভ্যতার উত্তরকালে উপমহাদেশে আর্যজাতির আগমণ ঘটে।


দ্রাবিড় জাতি সম্পর্কে কেউ কেউ একটি বড় ধরণের ভুল করে থাকেন। তারা দ্রাবিড় জাতি আর অস্ট্রিক নরগোষ্ঠিকে একজাতি হিসাবে অথবা এক নরগোষ্ঠি হিসাবে বিবেচনা করেন। হার্বাট রিজলী আদি অস্ট্রেলীয় ও নিগ্রোবটু উভয় জাতিকে দ্রাবিড় হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। আবার অনেকের মধ্যে এমন ধারণা বিদ্যমান আছে যে দ্রাবিড়রা একটি নরগোষ্ঠি এবং বাংলাদেশের অধিবাসীরাও মূলত দ্রাবিড় শ্রেণীভুক্ত। সেজন্য দ্রাবিড় জাতি সম্পর্কে সামান্য আলোচনার প্রয়োজন আছে।


৭ম শতাব্ধীতে কুমারীলা ভট্ট কর্তৃক রচিত তন্ত্রভর্তৃকা গ্রন্থে সংস্কৃত ভাষায় সর্বপ্রথম ’দ্রাবিড়’ শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। কর্মসুত্রে দাক্ষিণাত্যে আগত ক্যাথলিক পাদ্রী রবার্ট ক্যলডওয়েল সংস্কৃতের অনুসরণে ''দক্ষিণ ভারতের লোকজন'' বোঝাতে ইংরেজীতে দ্রাবিড় শব্দটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে তার ব্যবহৃত দ্রাবিড় শব্দটি সর্বত্র গৃহিত ও ব্যবহৃত হতে থাকে। দ্রাবিড় জাতি বলতে মূলত কোন নরগোষ্ঠি বুঝায় না। দ্রাবিড় জাতি বলতে অস্ট্রালয়েড পরবর্তী ও আর্য পূর্ববর্তী উপমহাদেশে আগমণকারী ও একটি ভাষার দ্বারা প্রভাবিত একাধিক গোষ্ঠিভুক্ত জনসংহতিকে বুঝায়। হরপ্পা ও মহোনঞ্জদারোতে প্রাপ্ত নরমুন্ড পরীক্ষা করে দেখা গেছে সেখানে যেমন দীর্ঘমুন্ড, সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠ গড়নের মানুষের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তেমনি খর্বাকৃতির দীর্ঘ নাসিকা, ধনুকের মতো বঙ্কিম ও উন্নত কপালের অপেক্ষাকৃত দুর্বল গড়নের মানুষের চিহ্নও পাওয়া গেছে।


মধ্যপ্রাচ্যের নরগোষ্টির এই দ্রাবিড় জাতির সাথে অস্ট্রিক জাতির তেমন বিবাদ বিষম্বাদের কথা জানা যায় না। ফলে সম্প্রীতির কারণে তাদের মাঝে অধিকহারে জাতিগত মিশেল হয়ে সম্ভবত একটি ধোয়াচ্ছন্ন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঐ সময়ে উপমহাদেশে অস্ট্রিক ভাষা মুন্ডার ব্যাপক প্রভাব থেকেও এ বিষয়টি অনুমান করা যায়। আবার দ্রাবিড় ভাষার সাথে অস্ট্রিক ভাষার বিভিন্ন সঙ্গতি থেকেও দ্রাবিড় ও অস্ট্রিকদের মধ্যে মিলমিশের ব্যাপকতা প্রতীয়মান হয। এই মিশেলের বিষয় থেকেই হার্বাট রিজলী অস্ট্রালয়েড নরগোষ্টিকে দ্রাবিড় জাতির সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। সেজন্য তার বক্তব্য সর্বগ্রাহ্য হয়নি।


দ্রাবিড় একটি ভাষার নাম। দ্রাবিড় ভাষার মধ্যে বর্তমানে প্রচলিত প্রধান ভাষাসমূহ হচ্ছে তামিল, কানাড়া (কর্ণাটক ও কেরালায় প্রচলিত), মালয়ালাম (কেরালায় প্রচলিত), তেলেগু (উড়িষ্যায় প্রচলিত), টুলু , কুরুক (মতভেদে অস্ট্রিক ভাষাজাত) প্রভৃতি। এর মধ্যে বাংলাদেশে কুরুক ভাষার প্রচলন আছে। উত্তর বঙ্গ ও শ্রীহট্টের চা-বাগানে বসবাসরত ওরাও উপজাতির ভাষা কুরুক।


দ্রাবিড়রা নগর সভ্যতার পত্তন করে। সিন্ধু উপত্যকায় দ্রাবিড়দের তৈরী প্রায় হাজার খানেক নগর ও বসতি আবিস্কৃত হয়েছে। ধারণা করা হয পাঞ্জাবে অবস্থিত হরপ্পা নগরে (লাহোর থেকে প্রায় ১২০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত) প্রায ৪০ হাজার এবং সিন্ধু প্রদেশে অন্তর্গত এবং সিন্ধুনদী তীরবর্তী মহোঞ্জদারোতে (করাচী থেকে প্রায় দুইশত মাইল উত্তর-পূর্বে) প্রায় ৩৫ হাজার লোক বাস করত। দুটি নগরই প্রায একই ধরণের পরিকল্পনায় নির্মিত। সেখানে সারিবদ্ধভাবে দোতালা বাড়ী, কক্ষ সংলগ্ন বাথরোম, পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থা, জনপথ, গুদাম ঘর, প্রার্থনা গৃহ, বাজার, বড় কূপ, আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে পানি নিরোধের ব্যবস্থা সহ সুইমিং পুল ও গণ শৌচাগারের ব্যবস্থা ছিল। তাদের বাড়ী ঘরগুলো দুর্গন্ধ, শব্দ ও চোরের উৎপাত থেকে মুক্তরাখার কৌশল অবলম্বন করে ইটের দ্বারা তৈরী করা হয়েছিল। তারা ওজন ও পরিমাপের একক জানত এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন সীলমোহর ব্যবহার করার কৌশলও আযত্ব করেছিল। দ্রাবিড়রা তূলা, গম, সব্জী ইত্যাদির চাষ জানত এবং গরু লালন পালন করত। তারা তামা ও ব্রোঞ্জের ব্যবহারও জানত। হরপ্পা ও মহোঞ্জদারো, উভয় ধ্বংসপ্রাপ্ত নগর থেকে উন্নতমানের মৃৎপ্রাত্র পাওয়া গেছে। এসব তাদের সুখী ও বিলাসী জীবন যাপনের প্রমাণ। ধ্বংসস্তপ থেকে প্রায় নৃত্যরতা একটি মূর্তি পাওয়া গেছে। অবশ্য এখনো এ মূর্তি সম্বন্ধে গবেষণা চলছে। তবে অপর একটি মূর্তি দেখে সকলেই সেটিকে পুরোহিতের মূর্তি বলে সায় দিয়েছেন। ফলে সিন্ধুসভ্যতার লোকজনের মধ্যে ধর্মচর্চার প্রামাণ পাওয়া যায়। তবে সে ধর্ম কিরূপ ছিল, তা এখনো নিরূপণ করা যায়নি। সিন্ধুসভ্যতার লোকজন ব্যবসা বাণিজ্যেও পারদর্শী ছিল। তাদের বাণিজ্য মিসর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই সিন্ধুসভ্যতা খ্রীস্টপুর্ব ৩৩০০ সালে শুরু হয়ে খ্রীস্টপূর্ব ১৬০০ সালে সমাপ্ত হয়। সিন্ধুসভ্যতা ধ্বংসের কারণ হিসাবে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। কেউ মনে করেন যে খরা ও বন্যা উভয় কারণে সিন্ধুসভ্যতা ধ্বংস হয়েছে। তবে জনপ্রিয় মতবাদ হচ্ছে যে আর্যরা যাযাবরে জীবনযাপন করত, তারা নগর জীবনে অভ্যস্ত ছিলনা। আর্যরা নগর জীবনের গুরুত্ব উপলব্ধী না করায়, তারা এসব অঞ্চল করায়ত্ব করার সময় ব্যাপক ধ্বংস লীলা চালায় এবং দ্রাবিড়রা আত্মরক্ষার্থে ক্রমাণ্বয়ে দক্ষিণ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে সেখানে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে। সিন্ধ সভ্যতা ধ্বংসের জন্য ঐতিহাসিকগণ আর্যদেরকেই দায়ী করেন। ফে. ফ্রাঙ্কলিন তার হিস্টরিজ টাইমলাইন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,''খিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে উত্তম-পশ্চিম থেকে আসা আর্যদের আক্রমণে এই সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়(^ সুত্র ৪)।'' দ্রাবিড়রা অবশ্য প্রায় হাজার বছর আর্য জাতিকে প্রতিরোধ করে। পরাজয় বরণ করলেও দ্রবিড়দের উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতি আর্যদেরকে অনেকাংর্শে প্রভাবিত করে। অনেক দ্রাবিড় দেবতা, যাদেরকে আর্যরা অসুর বলে হেলা করত, কালক্রমে তারাও আর্যদের আরাধ্য দেবদেবীর স্থানে সমাসীন হয। তবে আর্যরা দ্রাবিড়দেরকে সম্মানের চোখে দেখত না। দ্রাবিড়রা পরাজিত হলে আর্যরা তাদের অনেককে দাসদাসী হিসাবে ব্যবহার করে এবং চারটি শ্রেণীতে লোকজনদেরকে বিভাজন করে নিজেরা উচ্চ শ্রেণীতে আসন নিয়ে দ্রাবিড়দেরকে শুদ্র বা নিম্নতম শ্রেণীতে নিক্ষেপ করে। তবে আর্য সমাজপতিদের বিধানের বাইরেও আর্যদের সাথে দ্রাবিড়দের রক্ত সম্পর্কিত সম্পর্ক স্থাপিত হয এবং অতি ধীরে একটি মিশেলের আয়োজন চলতে থাকে। এই মিশেল শুধু নারী পুরুষে নয়, ভাব, ভাষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতিতেও অল্পবিস্তর প্রভার বিস্তার করে। পক্ষান্তরে দ্রাবিড়রা যে সব জায়গায় আশ্রয় গ্রহণ করে, সেখানে তাদের অস্ট্রিক জাতির সাথে সন্মিলন হয়। এ সন্মিলনের মধ্যদিয়েও দ্রাবিড় সমাজ ও অষ্ট্রিক জাতির পারস্পরিক ভাব বিনিময় ও মেলামেশায় শংকরায়নের বিক্রিয়া শুরু হয। উপমহাদেশে বিভিন্ন জাতির এই সন্মিলনই উপমহাদেশ বাসীর একটি বড় বৈশিষ্ঠ। প্রসঙ্গক্রমে এ কথাও উল্লেখ করা উচিত যে সিন্ধুসভ্যতাকে দ্রাবিড়দের সভ্যতা হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও, হরপ্পা ও মহোঞ্জদারোসহ অন্যান্য স্থানে যেসব লিপি পাওয়া গেছে, তার পাঠ আজো উদ্ধার করা যায়নি। প্রাপ্ত লিপি সমুহের পাঠোদ্বার হলে, ইতিহাস যদি পাল্টে যায়, তাহলেও বিস্ময়ের ব্যাপার হবেনা। তবে সিন্ধুসভ্যতা যে আর্যদের নয়, তার বড় প্রমাণ আছে। আর্যরা যাযাবর শ্রেণীর লোক ছিল আর হরপ্পার অধিবাসীগন ছিল গৃহী। আর্যরা অশ্ব ব্যবহারে পারদর্শী ছিল। কিন্ত সিন্ধুসভ্যতার লোকজন অশ্বের বিষয়ে ছিল অজ্ঞ।


সুত্র নির্দেশিকাঃ
^ ৪ দিলীপ দেবনাথ, ইতিহাসের খেরোখাতা, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, ২০০৬


Link: http://www.somewhereinblog.net/blog/elaheebd/29109313

বাংলাদেশের ভূভাগঃ বঙ্গদেশ, বাঙালি জাতি ও বাঙলা ভাষার মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকলে উদ্ভব ও বিকাশের ধারা একছিল না। বাংলাদেশ, বাঙালি ও বাঙলা এ তিন শব্দের মধ্যে প্রাচীণ হল বাংলাদেশের ভূভাগ। বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর বয়স ৫০০ কোটি বছর। ক্রমে ক্রমে অগ্নিকুন্ড থেকে শীতল হওয়ার ধারায় বিশ্বের ভূপৃষ্ট সর্বপ্রথম কঠিন শিলায় পরিণত হয়। উতপ্ত অবস্থা থেকে শীতলীকরণের প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্টের শিলাগুলো খন্ড খন্ড হয়ে তরল ভূভাগের উপরে ছিল ভাসমান ও বিচরণশীল। তেমনি বিচরণশীল একটি খন্ড বা প্লেটের নাম ভারতীয় প্লেট। এটা ছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছাকাছি। প্রায় ২০ কোটি বছর আগে ভারতিয় প্লেট উত্তরদিকে মন্থর যাত্রা শুরু করে। ৮ কোটি বছর আগে এর গতি প্রতি শতাব্দীতে ৯ মিটার থাকলেও ৫ কোটি বছর আগে এর গতি হ্রাস পেতে থাকে। ভারতিয় প্লেটের অয়তন আফগানিস্তান থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। বর্তমানে ভারতিয এ প্লেট উত্তর-পূর্বদিকে বার্ষিক ৫সেন্টিমিটার করে সঞ্চরণশীল। যাহোক ভারতিয় প্লেটের এই পরিক্রমায় এখন যেখানে উপমহাদেশ, সেখানে অবস্থিত টেথিস সমুদ্র লুপ্ত হযে যায় এবং ভারতিয় প্লেট অনবরত ধাক্কা খেতে থাকে ইউরেশিয় প্লেটের সাথে, যার কারণে উপরিভাগের নরম মাটি ভাঁজ হয়ে সৃষ্টি হয হিমালয়সহ অন্যান্য পর্বতমালার । সিলেটের পাহাড় ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় পর্বত এ প্রক্রিয়ায় টারসিয়ারি অধিযুগে সৃষ্ট। এ হিসাবে সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকার সৃষ্টি কোটি বছর আগে। পরবর্তী সময়ে প্লাইস্টোসিন যুগে (১০ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ বছর আগে) সৃষ্ট হয় বরেন্দ্র, মধুপুর ও লালমাই অঞ্চল ( ^ সুত্র ১),। বাংলাদেশের বাদ বাকী জায়গা গঠিত হয়েছে সাম্প্রতিককালে। এক গবেষণায় জানা যায যে যশোর ও ফরিদপুর গঠিত হয়েছে ৮/৯ হাজার বছর আগে এবং পলিমাটিদ্বারা গঠিত বিক্রমপুরের সৃষ্টি হযেছে ৫ থেকে ৩ হাজার বছর আগে। আর পলিমাটিদ্বারা এই ভূগঠন প্রক্রিয়া ধাবিত হয়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ক্রমান্বয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে (^ সুত্র ২)।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা উপলব্ধী করতে পারি যে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ, মধুপুর, সিলেট, কুমিল্লা ও পার্বত্য ত্রিপুরা ব্যতীত অন্যান্য ভূভাগের গড় বয়স ৫ হাজার বছর।


মানুষের উদ্ভবঃ বিজ্ঞানীরা মনে করেন মানবজাতি সর্ব প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল আফ্রিকা মহাদেশে। সেখানে একটি শাখাচারি বানরসদৃশ্য প্রাণী স্থলের খাদ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরিণত হয় ভূমিবাসীতে। তারপর বহুযুগের বিবর্তনের ধারায় এরা লাভ করে মানুষের বর্তমান আকৃতি। এ ধারায় প্রায ২০ লক্ষ বছর আগে হোমো বা মুনূষ্য, ৮ লক্ষ বছর আগে আবির্ভূত হয় দুপায়ে ভর দেযা হোমো ইরেক্টাস। এরা দুপায়ে ভর দিয়ে চলা ছাড়াও আগুনের বহুল ব্যবহার, খাবার তৈরীতে সক্ষম ছিল। প্রায ২ লক্ষ বছর আগে আবির্ভূত হয় হোমো সেপিয়ানদের এবং এদেরকেই বিবেচনা করা হয মানবজাতির পূর্বপুরুষরূপে।


অস্ট্রালয়েড বা অষ্ট্রিক ভাষীজাতিঃ উপমহাদেশে মানবজাতির আগমণের পঞ্জিকায় উল্লেখ করা হয় যে ৬০ হাজার বছর আগের সময় অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। ৬০ হাজার বছর আগে পিগমী জাতীয় অত্যন্ত খর্বাকায়, কালোবর্ণ, পশমী চুল ও বিরল গাত্রলোম বিশিষ্ট এক নর গোষ্ঠি উপমহাদেশের বনাঞ্চলে বাস করত। এরা জন হিসাবে হারিযে গেলেও ভারতীয় শোনিতে এদের অবদান একেবারে উপেক্ষিত নয়। অনেকে এদেরকে আন্দামান, সিংহলে নিগ্রোবটুদের গোত্রীয় বলে মনে করেন। নীহাররঞ্জন রাযের মতে ''বাঙলার পশ্চিম প্রান্তে রাজমহল পাহাড়ের বাগদীদের মধ্যে, সুন্দরবনের মৎস্যশিকারী নিম্নবর্ণের লোকজনের মধ্যে, মৈমনসিংহ ও নিম্নবঙ্গের কোনও কোনও স্থানে ক্বচিৎ কখনও, বিশেষভাবে সমাজের নিুতম স্তরের লোকদের ভিতর, যশোহর জেলার বাশফোড়দের মধ্যে মাঝে মাঝে কৃষ্ণাভ ঘনশ্যামবর্ণ, প্রায় উর্ণাবৎ কেশ, পুরু উল্টানো ঠোট, খর্বকায়, অতি চ্যাপ্টা নাকের লোক দেখিতে পাওয়া যায়, তাহা তো নিগ্রোবটু রক্তেরই ফল বলিয়া মনে হয (সুত্রঃ ^ ৩)।” সুতরাং বলা যায় যে মানবজাতির বিকাশ পর্বে উপমহাদেশ বা বাংলাদেশ জনশূণ্য ছিল না। বাংলাদেশে তথা উপমহাদেশে আদি পর্যায়ে কৃষ্ণবর্ণ, খাটো, ভেড়ার পশমের মত চুল বিশিষ্ট একটি অজ্ঞাত অরণ্যচারী নরগোষ্টির অস্থিত্ব ছিল। প্রখ্যাত জার্মান নরতত্ববিদ ফন আইকস্টেডট উপমহাদেশে নিগ্রোবটু বা তাদের কোন শাখা আদিবাসী হিসাবে স্বীকার না করলেও অস্ট্রালয়েডদের আগমণের পূর্বে নিগ্রোবটুদের দেহগড়ন ও বর্ণের মতোই উপমহাদেশে একটি অজ্ঞাত নরগোষ্টির বসবাস করার বিষয় নাকচ করেন নি। যাহোক এই অজ্ঞাত নরগোষ্ঠির বিচরণ কালে প্রায ৬০,০০০ বছর আগে (মতান্তরে এক লক্ষ বৎসর পুর্বে) আফ্রিকা মহাদেশ থেকে যাযাবর ও শিকারী শ্রেণীর মানুষ লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগর অতিক্রম করে উপমহাদেশে আগমণ করে। এরা ক্রমাগত উপকূল ইত্যাদি পথ বেয়ে দক্ষিণ পুর্ব এশিয়া সহ অস্ট্রেলিযা মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এদেরকে অস্ট্রালয়েড হিসাবে বিবেচনা করা হয। অস্ট্রালয়েডরা দীর্ঘমুন্ডু, চ্যাপটা নাখ, খর্বকায়, কালো গাত্রবর্ণ বৈশিষ্টের অধিকারী ছিল। তাদের চুল ছিল ক্ষেত্রভেদে বিভিন্ন রকম। রশির মতো পাকানো, ঢেউ জাগানো, এমনকী সোজা চুলও তাদের মধ্যে ছিল। মেলানিয়শানদের ক্ষেত্রে সোজা চুলের আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। এরা ক্রমে দক্ষিণ ভারত, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও ওসেনিয়ায় বসতি স্থাপন করে। অনেকে মনে করেন এরাই উপমহাদেশে প্রথম সভ্যতা স্থাপন করে। বসতি স্থাপনের পর এরা চাষাবাদ ও গুড় তৈরীর প্রণালী সর্ব প্রথম আয়ত্ব করে। অস্ট্রালয়েডরা দীর্ঘদিন ভারতের প্রথম বসতি স্থাপনকারী হিসাবে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিল। অস্ট্রালয়েডরা কাউকে বিতাড়িত করে নিজেদের বসতি স্থাপন করেনি। বরং দুর্গম স্থানগুলোকে সুগম, পতিত জায়গাসমূহ আবাদ করে উর্বর জমিতে পরিণত করে এবং বনের পশুকে পোষ মানিয়ে মানবকল্যানে নিয়োজিত করে। উপমহাদেশে ধান চাষের প্রচলন অস্ট্রালয়েডরাই করে থাকে। দ্রাবিড় জাতি যখন আর্যদের হাতে নিগৃহিত হয়ে অস্ট্রালয়েড উপজাতি সমূহের বাসস্থানে আশ্রয় নেয়, তখন তাদের মধ্যে তেমন কোন অসম্প্রীতির বিবরণ পাওয়া যায়না। অস্ট্রালয়েড নরগোষ্ঠিভুক্ত উপজাতিসমূহ উপমহাদেশের প্রায় সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়। অস্ট্রালয়েডরা ভাষার ব্যবহার জানত। তাদের ভাষা বিশেষত মুন্ডাদের ভাষার প্রভাব উপমহাদেশে অত্যন্ত প্রবল ছিল। Burrow এর মতে অস্ট্রালয়েড নরগোষ্টির অনেক পরে উপমহাদেশে আগত আর্যজাতির সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ঋগবেদে প্রায় ৫০০ শব্দ প্রাচীন মুন্ডাভাষা থেকে নেয়া হয়েছে। Witzel মতে ঋগবেদের প্রাচীন অংশে প্যারা মুন্ডা এবং শেষাংশে দ্রাবিড় ভাষার প্রভাব বিদ্যমান আছে। এথেকে প্রতীয়মান হয় যে পাঞ্জাবে ঋগবেদ রচনাকালের পূর্বে অস্ট্রিক জাতির নিবাস ছিল এবং পরবর্তীতে সেখানে দ্রাবিড়দের অবির্ভাব ঘটে। দ্রাবিড়দের পরাক্রমের সময়ও মুন্ডা ভাষার যথেষ্ট প্রভাব ছিল। অস্ট্রিক উপজাতিসমূহের মধ্যে এখনো তাদের আদি ভাষা টিকে আছে। বাংলাদেশের কোল, ভীল, মুন্ডা, সাওতাল প্রভৃতি উপজাতি অস্ট্রালয়েড নরগোষ্ঠির অন্তর্ভূক্ত। অনেকের মতে এই সব অস্ট্রালযেডরাই বাংলাদেশের আদি বাসিন্দা। বাংলা ভাষার মধ্যেও অস্ট্রিক ভাষার প্রভাব অনেকখানি। বাঙ্গালী জাতির অনেকেরই মধ্যে অস্ট্রিক নরগোষ্ঠির প্রধান প্রধান দৈহিক বৈশিষ্ঠ বর্তমান আছে।


অস্ট্রিকরা সেই প্রস্তর যুগ থেকে উপমহাদেশের বাসিন্দা এবং ঐ সময়ে বাংলাদেশে বিস্তীর্ণ ভূভাগ জাগ্রত। আর অস্ট্রালয়েডরা উপমহাদেশের পশ্চিম থেকে আসামের পাহাড়ি অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। ফলে বাংলাদেশে আদিবাসী হিসাবে প্রাথমিক হিসাবে অস্ট্রালয়েডদেরকে বিবেচনায় আনতেই হয়।


প্রস্তর যুগের উত্তরকালে অস্ট্রিক জাতির ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র দেশীয় গাছ গাছালী দ্বারা তৈরী হত। অস্ট্রিক জাতি ছিল কৃষিজীবি। তাই তারা গড়ে নি কোন নগর সভ্যতা। বাংলাদেশের যে গ্রামীণ সভ্যতা তা অষ্ট্রিকদেরই অবদান। দ্রাবিড় ও আর্যদের আগমেণর পূর্ব পর্যন্ত তারা ব্রৌঞ্জ বা তামার ব্যবহার জানত না। সেজন্য অস্ট্রিক জাতির কোন সভ্যতার বস্তগত প্রমাণ পাওয়া যায়না, সংস্কৃতি ও ভাষার মধ্যেই অস্ট্রিক জাতিকে স্পষ্টরূপে পাওয়া যায়।


সুত্র নির্দেশিকাঃ
^ ১. মর্গান, জে,পি ও অন্যান্য কোয়ার্টার্নারি জিওলজি অব বেঙ্গল বেসিন, লুসিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়, ১ সেপ্টেম্বর ১৯৫৫
^ ২. সেন, পি,কে ও অন্যান্য, প্যালাওনভিরনমেন্ট অব বেঙ্গল বেসিন ডিউরিং দ্য হলসিন পিরিয়ড, জিওরেভ, ভারত, ১৯৮৮
^ ৩. রায়, নীহাররঞ্জন; বাঙালীর ইতিহাস আদি পর্ব, দে'জ পাবলিশিং , ৫ম সংস্করণ, ১৪১২ বঙ্গাব্দ


Link: http://www.somewhereinblog.net/blog/elaheebd/29106716



ওয়ারেন বাফেট। এক সময় মুদি দোকানে কাজ করতেন। ছিলেন হকার। বিক্রি করতেন সংবাদপত্র। এখন দুনিয়ার দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী। বর্তমানে ৬৩টি কোম্পানির মালিক। এ পর্যন্ত ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার দান করেছেন বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায়। তারপরও তিনি ৪ হাজার কোটি ডলারের মালিক। এখন তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনেক বিশেষণ। মার্কিন বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী এবং লোকহিতৈষী বলে পরিচিতি পেয়েছেন। অনেকে তাকে ‘মিরাকল অব ওমাহা’ নামে ডাকেন। এত বিত্তবেসাতের মালিক হয়েও তার মধ্যে নেই কোন বিলাসিতা।

জীবন যাপন করেন অতি সাধারণ মানের। ৫০ বছর আগে বিয়ের পরে ৩ বেডরুমের যে বাড়িটি কিনেছিলেন এখনও সেখানেই বাস করেন। এমনকি বাড়িটির চারপাশে নেই কোন আলাদা প্রাচীর। তিনি বলেন, আমার যা কিছু দরকার তার সবই আছে এখানে। বিশ্বের এত বড় ধনী, তার বাসার চারদিকে নেই কোন বেড়া বা সীমানা প্রাচীর। এ বিষয়ে তার পরামর্শ হলো- প্রকৃতপক্ষে আপনার যতটুকু দরকার তার বেশি কিছু কিনবেন না। আপনার সন্তানদেরও এমনটা ভাবতে ও করতে শেখান। নিজের গাড়ি তিনি নিজেই চালান। তার আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জেট কোম্পানি। কিন্তু ভ্রমণ করেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে ইকোনমিক ক্লাসে। অনেকেই ভাবতে পারেন, এটা অসম্ভব। কিন্তু তিনি তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। সমপ্রতি তিনি সিএনবিসি-কে এক ঘণ্টার একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তুলে ধরেছেন জীবনের উত্থান কাহিনী। তার মতে, জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য নিজেকে আগে স্থির করতে হয় তার লক্ষ্য। তিনি এমনই এক লক্ষ্য নিয়ে মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথম শেয়ার কিনেছিলেন। তারপরও তিনি মনে করেন এ ব্যবসায় আসতে তার অনেক দেরি হয়ে গেছে। আরও আগে ব্যবসা শুরু করা উচিত ছিল। তাই তার পরামর্শ আপনার সন্তানকে বিনিয়োগে উৎসাহিত কর্বন। সংবাদপত্র বিক্রি করা অর্থ দিয়ে তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সে ছোট্ট একটি ফার্ম কেনেন। তার মতে, অল্প অল্প করে জমানো অর্থ দিয়ে যে কেউ কিনতে পারেন অনেক কিছু। সেজন্য সন্তানদের তিনি কোন না কোন ব্যবসায় নিয়োজিত করার পরামর্শ দেন।

১৯৩০ সালের ৩০শে আগস্ট নেবরাসকা’র ওমাহা এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন এই বরেণ্য ব্যক্তি। তার পিতার নাম হাওয়ার্ড বাফেট। ওয়ারেন হলেন তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। শৈশবে কাজ করেছেন মুদির দোকানে । মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে তিনি জমা দেন আয়কর রিটার্ন। সেখানে তিনি নিজেকে সংবাদপত্র বিলিকারী হিসেবে পরিচয় দেন। তার পিতা হাওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর পর তিনি পড়াশোনা করেন ওয়াশিংটনের উডরো উইলসন হাই স্কুলে। ১৯৪৫ সালে তিনি হাই স্কুলে থাকতেই এক বন্ধুর সঙ্গে ব্যবহার করা একটি পিনবল মেশিন কেনেন মাত্র ২৫ ডলারে। মেশিনটি বসানোর মতো জায়গা ছিল না তাদের। তারা এক নাপিতের দোকানের ভেতরে তা বসিয়ে দিলেন। এর মাত্র কয়েক মাসের মাথায় তারা বিভিন্ন স্থানে বসালেন একই রকম তিনটি মেশিন। এভাবেই তার ব্যবসায় যাত্রা শুর্ব। তিনি ১৯৫০ সালে ইউনিভার্সিটি অব নেবরাসকা থেকে অর্থনীতিতে অর্জন করেন বিএস ডিগ্রি। ১৯৫১ সালে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে এমএস হন। ১৯৫১ থেকে ’৫৪ পর্যন্ত বাফেট-ফক অ্যান্ড কো.-তে ইনভেস্টম্যান সেলসম্যান হিসেবে চাকরি করেন।

নিউ ইয়র্কে গ্রাহাম-নিউম্যান করপোরেশনে সিকিউরিটি এনালিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৫৪ থেকে ’৫৬ পর্যন্ত। এছাড়া তিনি বাফেট পার্টনারশিপ লি., বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে ইনস্যুরেন্সসহ বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি করেছেন। এর বেশির ভাগই তার নিজের। ১৯৬২ সালে তিনি পরিণত হন মিলিয়নিয়ারে। বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে হলো একটি টেক্সটাইল কারখানা। এখানকার প্রতিটি শেয়ার তিনি ৭.৬০ ডলারে জনগণের মাঝে ছেড়ে দেন। এক পর্যায়ে ১৯৬৫ সালে প্রতি শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানি ১৪.৮৬ ডলার দেয়। এর মধ্যে ফ্যাক্টরি এবং সরঞ্জাম দেখানো হয়নি। এরপর তিনি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কেন চেস-এর নাম ঘোষণা করেন। ১৯৭০ সালে তিনি শেয়ার হোল্ডারদের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত চিঠি লেখা শুর্ব করেন। শেয়ারহোল্ডারদের কাছে এ চিঠি ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়। এ সময়ে বেতন হিসেবে তিনি বছরে পেতেন ৫০ হাজার ডলার। ১৯৭৯ সালে তার বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে প্রতি শেয়ারের জন্য ৭৭৫ ডলার দিয়ে ব্যবসা করতে থাকে। এই শেয়ারের দাম ১৩১০ ডলার পর্যন্ত ওঠে। এ সময়ে তার নিট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২ কোটি ডলার। এর ফলে ফরবিস ম্যাগাজিনে প্রথমবারের জন্য তিনি ফরবিস ৪০০-তে স্থান পান। ২০০৬ সালের জুনে তিনি ঘোষণা দেন যে, তিনি বার্কশায়ার হোল্ডিংয়ের শতকরা ৮৫ ভাগ বার্ষিক উপহার হিসেবে পাঁচটি ফাউন্ডেশনে দিয়ে দেবেন এবং তা শুরু হবে জুলাই থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ দেয়া হয় বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনকে। ২০০৭ সালে তিনি শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশে এক চিঠিতে জানান, শিগগিরই তিনি একজন তরুন উত্তরসূরি নিয়োগ দিতে লোক খুঁজছেন। ২০০৮ সালে তিনি বিল গেটসকে হটিয়ে নিজে হন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী। ফরবিসের মতে, তখন তার সম্পদের পরিমাণ ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার। তবে ইয়াহু’র মতে তার তখনকার সম্পদের পরিমাণ ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এর আগে পর পর ১৩ বছর ফরবিস ম্যাগাজিনের হিসাবে বিশ্বের এক নম্বর ধনী ছিলেন বিল গেটস। এর পর ২০০৯ সালে গেটস তার শীর্ষস্থান পুনর্বদ্ধার করেন। দ্বিতীয় স্থানে চলে আসেন ওয়ারেন বাফেট। ২০০৮ থেকে ২০০৯ অর্থবছরে ওয়ারেন বাফেট লোকসান করেছেন ১২০০ কোটি ডলার।

ব্যক্তিগত জীবন

ওয়ারেন বাফেট ১৯৫২ সালে বিয়ে করেন সুসান থম্পসনকে। তাদের রয়েছে তিন সন্তান- সুসান বাফেট, হাওয়ার্ড গ্রাহাম বাফেট এবং পিটার বাফেট। ২০০৪ সালের জুলাই মাসে স্ত্রী সুসান মারা যান। এর আগে ১৯৭৭ সাল থেকে তাদের বিচ্ছেদ না ঘটলেও তারা আলাদা বসবাস করতেন। তাদের মেয়ে সুসান ওমাহাতে বসবাস করেন। তিনি সুসান এ. বাফেট ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে সেবামূলক কাজ করেন। ওয়ারেন বাফেট ২০০৬ সালে ৭৬তম জন্মদিনে বিয়ে করেন তার দীর্ঘ দিনের সঙ্গী অ্যাস্ট্রিড মেনঙকে। ২০০৬ সালে ওয়ারেন বাফেটের বার্ষিক বেতন ছিল ১ লাখ ডলার। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তার বেতন বেড়ে হয় ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলার। ওমাহা এলাকার ডান্ডিতে তিনি ৩১ হাজার ৫০০ ডলার দিয়ে বর্তমান বাড়িটি কিনেছিলেন। এর বর্তমান দাম ৭ লাখ ডলার। এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ার লেগুনা বিচে রয়েছে তার ৪০ লাখ ডলার দামের একটি বাড়ি।

তিনি খুব ভাল তাস খেলতে জানেন। তাস খেলেন শ্যারন ওসবার্গ ও বিল গেটসের সঙ্গে। সপ্তাহে ১২ ঘণ্টা কাটে তার তাস খেলে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে খবর প্রকাশিত হয় যে, ওয়ারেন কোন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। তাছাড়া তার ডেস্কে নেই কোন কম্পিউটার। তার কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে এখন ৬৩টি কোম্পানির মালিক। এসব কোম্পানির প্রধান নির্বাহী অফিসারকে তিনি বছরে মাত্র একটি চিঠি লেখেন। তাতে সারা বছরের কর্মকৌশল বলে দেয়া থাকে। নিয়মিত তাদেরকে নিয়ে তিনি মিটিং করেন না। এজন্য তার পরামর্শ হলো- ঠিক জায়গায় ঠিক ব্যক্তিকে নির্বাচিত কর্বন। অর্থাৎ ঠিক জায়গায় ঠিক ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হলে তাকে কাজের কথা বলে দিতে হয় না। ওয়ারেন বাফেট তার নির্বাহীদের দু’টি মাত্র নিয়ম বলে দিয়েছেন। তার প্রথমটি হলো- শেয়ারহোল্ডারদের অর্থ নষ্ট করো না। দ্বিতীয় নিয়মটি হলো- প্রথম নিয়মকে ভুলে যাবে না। লক্ষ্য স্থির করো এবং সেদিকে লোকের দৃষ্টি কাড়তে চেষ্টা করো।

তার জীবনধারাকে স্পর্শ করেনি সমাজের উচ্চশ্রেণীর সামাজিকতা। তিনি নিজেই নিজের খাবার তৈরি করেন। কিছু পপকর্ন নিজেই প্রস্তুত করে খান এবং বাসায় বসে টেলিভিশন দেখেন। তার সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিল গেটসের পরিচয় হয় মাত্র ৫ বছর আগে। তখনও বিল গেটস জানতেন না যে, ওয়ারেনের সঙ্গে তার অনেকটাই মিল আছে। ফলে মাত্র আধা ঘণ্টা পর তিনি ওয়ারেনের সঙ্গে দেখা করেন। যখন ওয়ারেনের সঙ্গে তার দেখা হয় তা স্থায়ী হয়েছিল দশ ঘণ্টা। এর পর থেকেই তার ভক্ত হয়ে যান বিল গেটস।

যুব সম্প্রদায়ের জন্য ওয়ারেন বাফেটের পরামর্শ হলো- ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংক লোন থেকে দূরে থাকুন। নিজের যা আছে তাই বিনিয়োগ করুন। মনে রাখবেন- ক) টাকা মানুষ সৃষ্টি করে না। কিন্তু মানুষ টাকা সৃষ্টি করে। খ) যতটা সম্ভব জীবনধারাকে সহজ-সরল করার চেষ্টা করুন। গ) অন্যরা যা বলে তাই করবেন না। তাদের কথা শুনুন। তারপর আপনার যা ভাল মনে হয় তাই করুন। ঘ) অপ্রয়োজনীয় কোন বিষয়ে অর্থ খরচ করবেন না। ঙ) জীবন আপনার। সেজন্য আপনার জীবনকে চালাতে অন্যদের কেন সুযোগ দেবেন?


সহায়তা /সুত্র : ইন্টারনেট, মানবজমিন-০৯/১১/০৯

সুখ কি?

সুখ- এর জৈবিক সংজ্ঞা : কোন স্টিমুলাস বা উত্তেজকের প্রতি আমাদের মস্তিষ্কের রাসায়নিক ও স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া যা আমাদের ভেতর সুখের অনুভব তৈরী করে

আবিষ্কৃত রাসায়নিক যৌগ "এন্ডরফিন্স" গুলোকেই এই "সুখের" মূল বলে বিভিন্ন গবেষনায় জানা যায় এখন ঘটনা হইলো, এন্ডো মানে হইলো ভিতরের আর মরফিন মানে বেদনা নাশক তার মানে কি দাড়াইলো ? সুখের রাসায়নিক শরীরের ভিতরের বেদনাকে কিংবা অসুখের অবস্থাকে পরিবর্তন করে সুখের অবস্থায় নিয়ে যায়

ক্ষুধা পেলে সুস্বাদু খাবার আমাকে সুখ দেয়, সুখ দেয় প্রিয় মানুষের চুম্বন। প্রিয় দেশের জয় আমাকে সুখ দেয়, সুখ দেয় পড়ন্ত বিকেলের রোদ। সুখের অনুভবকে বিশ্লেষন করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা তাই ইন্দ্রিয়কে অনুসন্ধান করেছেন, মানবের মস্তিষ্ককে কেটে ছিড়ে দেখেছেন এবং আমাদের জানিয়েছেন - সুখের স্টিমুলাস বা উত্তেজক শরীরের বাহির থেকে পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে ভেতরে আসুক, অথবা ভিতরের কোন এক উৎস থেকে মস্তিষ্কে পৌঁছাক - সুখ আসলে শেষ পর্যন্ত কিছু জৈব রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি ।

জীবণে সবাই সুখী হতে চায়, কিন্তু, কেউ কি একজন সুখী মানুষের ছবি চিএপটে তুলতে পারবেন? না, আমরা কেউ পারব না আশ্চর্য, কি অদ্ভূত অক্ষমতা!!! আসলে সুখ কি? সন্তুষ্টি, আনন্দ, হাসি, তৃপ্তি, সাফল্য, সমৃদ্ধি, সম্মান, স্বীকৃতি, ভালবাসা, যত্ন -এগুলো কি সুখের অবয়ব? কি দিয়ে সুখের ছবি আঁকা যায়? আমি সুখ খুঁজি অনুভূতিতে, ভাবনায়, না পাওয়ার এ পৃথিবীতে কিছু পাওয়ার মাঝে হয়তোবা, অন্যরা ভাববে ভাবুক মানুষ, ভাবনায় সুখ খুঁজে নেন জীবণের চৌহদ্দিতে কোন চমক নেই, কোন অর্জন নেই, তারপরেও ভাবে সুখী এখানেই জীবণের বৈচিএ্য একেক মানুষ একেক ভাবে দেখে

সুখ কি প্রজাপতি, প্রেয়সীর মিস্টি হাসি, ভোর রাতের মিস্টি স্বপ্ন, চায়ের কাপে উষ্ণ চুমুক, কর্মব্যস্ত দিনের শেষে রবীন্দ্রসংগীত, রিমঝিম বৃস্টির শব্দ, তপ্ত সন্ধ্যায় দক্ষিণা বাতাসের আলতো ছোঁয়া, মুঠো ফোনের সেই রিংটোনটি, জোৎস্না রাতে রূপালী আলোর বন্যা, কিন্নরীর সুর, অপেক্ষার অকস্মাৎ অবসান, নিস্পলক দৃস্টি, অপ্রশস্ত বারান্দায় পদচারিতার পদধ্বনি? আসলে কি জানেন, সুখ আপনার খুব কাছাকাছি বসবাস করে, খুঁজে নিতে হয় তাকে, আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তাকে লালন করতে হয় সুখ সোনার হরিণ নয় আমি সুখী দু:খ আমায় ছোঁয় না এরকম প্রত্যয়ী ভাবনায় জীবণ সাজাতে পারলেই সুখ নামক পাখিটি বাস করবে প্রতিটি জীবণে আমার আজকের সকালের নিস্তরঙ্গতায় তাই সুখের শান্তিধারা বইছে আসুন, আমরা সুখ পাখিটাকে মনের খাঁচায় বন্দী করে তাকে লালন করি আমৃতু্য

"...আজি বহিতেছে
প্রাণে মোর শান্তিধারা
মনে হইতেছে
সুখ অতি সহজ সরল, কাননের
প্রস্ফুট ফুলের মতো, শিশু-আননের
হাসির মতন, পরিব্যাপ্ত, বিকশিত,
উন্মুখ অধরে ধরি চুম্বন-অমৃত
চেয়ে আছে সকলের পানে বাক্যহীন
শৈশববিশ্বাসে চিররাএি চিরদিন

বিশ্ববীণা হতে উঠি গানের মতন
রেখেছে নিমগ্ন করি নিথর গগন

সে সংগীত কী ছন্দে গাঁথিব! কি করিয়া
শুনাইব, কী সহজ ভাষায় ধরিয়া
দিব তারে উপহার ভালোবাসি যারে,
রেখে দিব ফুটাইয়া কী হাসি-আকারে
নয়নে অধরে, কী প্রেমে জীবনে তারে
করিব বিকাশ! সহজ আনন্দখানি
কেমনে সহজে তারে তুলে ঘরে আনি
প্রফুল্ল সরস! কঠিন-আগ্রহ-ভরে
ধরি তারে প্রাণপণে-মুঠির ভিতরে
টুটি যায়! হেরি তারে তীব্রগতি ধাই_
অন্ধবেগে বহুদূরে লঙ্ঘি চলি যাই,
আর তার না পাই উদ্দেশ\
চারি দিকে
দেখে অজি পূর্ণপ্রাণে মুগ্ধ অনিমিখে
এই স্তব্ধ নীলাম্বর, স্থির শান্ত জল_
মনে হল, সুখ অতি সহজ সরল\

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ব্লগিং অনেক দিনের... কমিউনিটি ব্লগে সামহোয়ারইনব্লগেও দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পেরিয়ে ফেল্লাম... অনেক ব্লগ পড়া হয় ... সব লেখা যে ভালো লাগে তা নয়.. কিছু কিছু লেখা মনে হয় অন্যদের সাথে শেয়ার করি...
আজ শেয়ার কর্লাম পাললিক মনের শবে-বরাত নিয়ে একটা লেখা...

হালুয়া রুটির শবে-বরাত, শিকেয় তোলা আল-কুরআন ও Customize ইসলাম চর্চা

শপথের কান্ডারী, সুশীলতার কাবাগৃহ প্রথমালো পত্রিকার গত মঙ্গলবারের নকশা পাতা পুরোটাই ভর্তি করা হয় শবে-বরাতের হালুয়া ও নানাবিধ রেসিপি দিয়ে! বোধ করি অন্যান্য পত্র-পত্রিকার কথিত ধাঁচের পাতাও খালি থাকবেনা। আর রেসিপি দেয়ার মহান দায়িত্ব দিয়ে তো কাগজওয়ালারা খালাস! মাল মসলা দেবে কে? কেন- অগোরা, নন্দন, পিকিউএস, সপ্ন সবাই তো এরই মধ্য ঢাকঢোল পিটিয়ে তেল, আটা, ময়দা, গোস্ত, সুজিতে শবে বরাতের মহান পবিত্রতায় (!) গদগদ হয়ে বিরাট মূল্যহ্রাস! খাও বাংগালী খাও। হালুয়া রুটি গোস্ত ভূনা খেয়ে কোকাকোলার ঢেকুর তুলে জপতে থাক- শবে বরাত, ইল্লাল্লাহ্‌! ইহকাল পরকালে ঠেকায় কে?

শিশুবেলা থেকেই ইসলাম ধর্মের মৌলিক নীতি সমূহের চেয়ে আধা, সিকি বা পুরা ভুয়া নানান 'ভাল' কাজের উৎপাতে প্রাণ ওস্ঠাগত। হিজরী শাবা'ন মাসের এদিনে মা, চাচী, দাদীকে দেখেছি বেশ কিছু রসম নিয়ে দৌড় ঝাপঁ। মুরগী জবাই, রুটি বানানো এর মধ্য অন্যতম। জিজ্ঞাসু মন এটা কেন? ওটা কেন? বলে জননী কে ঘ্যানর ঘ্যানর করলে জবাব এদিনে আল্লাহ রিজিক বরাদ্ধ করেন। তাই ভাল ভাল খাবার। তা না হলে সারা বছর ছাইপাশ খেতে হতে পারে!

মাগরিবের পরপরই স্থানীয় মসজিদে ওয়াজের জোয়ার। অন্তত: রাত ১২ টা অবধি এলাকাবাসীর উপর শব্দ জুলুম। তারপর ব্যাপক কোরাস সমেত মিলাদ। ইয়া নবী সালামালাইকা..। অত:পর জিলাপী বিতরন। জনতার মূলস্রোত এতেই হাঁফিয়ে যায়। দীর্ঘক্ষন অযু চেপে রাখা থেকে নিস্কৃতি পেয়ে মনের আনন্দে পেটের বায়ুমন্ডল হালকা করতে করতে বাটিতে গমন। বোধগম্য অবোধগম্য নানাবিধ ধর্মীয় উপাখ্যান, আরবী ফারসি শে'রের নর্তন কুর্দন শেষে কাঠমোল্লার মাইক থেমে আসলে নিদ্রাহত জীবমন্ডলের স্বস্তি প্রকাশ।

শেষরাতে নিকটবর্তী আসমানে স্রস্টার গণ-ক্ষমা ডাকে সাড়া দেয়ার মত জাগ্রত মুসলিমের সংখ্যা খুবই সীমিত। যারা থাকতেন তাদের মধ্যেও পরবর্তী ২/৪/১০/২০ বছরেও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় 'খাছলত' বদলের কোন নমুনা দেখিনি!
তবে ম্যালা বদলেছে বরাতের রাতের বরাত। বেনিয়া দিবস সংস্কৃতির কবলে পড়েছে বেচারা রাতটি। পাঁড় ধর্মবিচ্যুত পত্রিক বা টিভি চ্যানেলও ২/৪ টা প্রবন্ধ, ৩ খানা টক-শো এমনকি ক্যালিওগ্রাফি যুক্ত লোগো প্রদর্শন করছেন ব্যাপক পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্য সহকারে। চট্টগ্রাম ও সিলেটিরা রাতভর দৌড়াচ্ছেন বদনা শাহ, চৌকি শাহ, হুক্কা শাহ সহ নাম জানা বা অজানা শাহ বাবাদের দরবারে! পিছিয়ে নেই বিএনপি, আলীগ সহ প্রকৃত হালুয়া রুটি কেন্দ্রীক দলগুলো। কাঙালী ভোজ, মিলাদ শরীফ...। তবে গোফেঁ তা দিচ্ছে সুপারস্টোর গুলো। হৈ হৈ রৈ রৈ করে এ বাবদ বেচা বাট্টাটা বাড়িয়ে নিচ্ছেন। অধ:পতিত আরেকদল আতশবাজি পোড়াচ্ছে। সাকুল্যে এ..ই... আমাদের শবেবরাত!

বড্ড বেকায়দায় মহানজীবন ব্যবস্থা ইসলাম। কাজের বুয়া বা ড্রাইভারদের সমান নিয়ন্ত্রনে নিমজ্জিত। পরিমানমত ও প্রয়োজনমত এবং সুবিধামত একটুখানি ইসলাম চর্চা করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে সিংহভাগ মুসলিম। পবিত্রগ্রন্থ কুরআন শিকেয় তোলা আছে ১ বা ২ পিস। বিশেষ ক্ষনে, লগনে তা নামানো হয়। বিশেষ করে কেউ বিয়োগ হলে। ব্যান্ড, নর্তকী, বিবাহসজ্জার দলের মত ভাড়ায় মোল্লার দল পাওয়া যাচ্ছে। ইংগিত করলেই সদলবলে এসে কোরান খতম কাম মৌলুদ শরীফের প্যাকেজ সার্ভিস হোম ডেলিভারী। রেটও বেশী না গ্রামে ১০ জনের দল হলে মাথাপিছু ৫০ টাকা, শহরে ১০০ বা আরও! গৃহকর্তার ও বিগত মহাজনের সকল মুসকিল আসান! ন্যাপথালিন, আগরবাতি, আতরের গন্ধ শুকোতে না শুকোতেই চোরাকারবার, ঘুষ, দখল, লুট, প্রতারণা...।

পিছিয়ে নেই পাঁড় ধার্মিক দাবিদাররাও। তথাকথিত ইসলামি চিন্তাবিদরা। বাছাইকৃত আয়াতের চটি বেরিয়েছে। এমনকি খন্ডিত আয়াত। নিজেদের বক্তৃতার মাঝখানে একটুখানি বসিয়ে দিলেই পগারপার। বা! বা! বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুনের মাঝে আল কোরানের এমন আলো! ঘরে ঘরে উহা জ্বালাতে হবে! জন্ম হচ্ছে ক্ষীনদৃস্টি সম্পন্ন আরেকদল দলান্ধ।
তবে প্রায়ান্ধ সদ্যজাত তথাকথিত জেহাদী জজবা থেকে এটা ঢের ভাল। নির্বিচারে নিরীহ প্রানে অকারনে বোমাহামলা করে, ফতোয়ার ফ না বুঝেই ঢিলা কুলুখ মেরে, বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন হৈ হট্টগোল কারী ভোদাই গুলোও রেফারেন্স দিয়ে বসছে শক্রকে কতল কর। মহাবিপদ!

এসবের ফাঁদেই পড়েছে লাইলাতুল বারাআ'ত। আসলে মহান স্রস্টার সান্নিধ্য আসার যেমন রয়েছে কতগুলো মৌলিক শর্ত, আর তেমন রয়েছে কিছু স্পেশাল মোমেন্ট। হালাল জীবিকা তেমন ১টি কঠিন শর্ত। আর প্রত্যেকটি রাতেরই শেষ ভাগ তেমন ১টি মূহুর্ত। প্রশান্ত প্রকৃতি, নিস্তব্ধ ভূমন্ডল, আবছা আলোকের মাঝে নি:সঙ্গ একেকজন মানুষের সাথে তাদের স্রস্টা, রিজিকদাতার একান্ত আলাপের সময়। ৩৫৪ রাতের মধ্য এ রাত যদি আরো মহিমামন্বিত হয়, হোক। আরো ভাল।

পাপিস্ঠ মানবমন্ডলীর বর্ধিত সুযোগ। এটার সাথে হালুয়া, বিজ্ঞাপন, ম্যারাথন ওয়াজের কি সম্পর্ক?

এ এক নিভৃত সময়। মহা-গুরুত্বপুর্ন! হৈ চৈ এর নয়।

সংগৃহীত : পাললিক মন

স্টিভ জবস আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ। ২০০৫ সালে তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হন। সেখানে দেওয়া তাঁর বক্তৃতাটি ছিলো অসাধারণ একটি বক্তৃতা। সত্যি কথা বলতে কি এটা আমার জীবনে শোনা/পড়া সেরা বক্তৃত। দুর্ভাগ্যক্রমে অনুবাদের পর এর আবেগ অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছে! তবুও অনুবাদ করার লোভ সামলাতে পারলাম না। মূল ইংরেজী বক্তৃতাটি পাওয়া যাবে এখানেঃ http://news-service.stanford.edu/news/2005/june15/jobs-061505.html




ভালোবাসার কাজটি খুঁজে নিতে হবে
======================

পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি। আমি কখনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করিনি। সত্যি কথা বলতে কি, আজকেই আমি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান সবচেয়ে কাছ থেকে দেখছি। আজ আমি তোমাদেরকে আমার জীবনের তিনটি গল্প বলবো। তেমন আহামরী কিছু না। শুধু তিনটা গল্প।

প্রথম গল্পটি কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা এক সূতোয় বাঁধা নিয়ে (connecting the dots)।

রিড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার ছয় মাসের মাথায় আমি মোটামুটি পড়ালেখা ছেড়ে দিই। অবশ্য পুরোপুরি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দওয়ার আগে প্রায় বছর দেড়েক এটা সেটা কোর্স নিয়ে কোনমতে লেগেছিলাম। তো কেনো আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছিলাম?

ঘটনার শুরু আমার জন্মের আগে থেকে। আমার আসল মা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অবিবাহিতা তরুণী গ্রাজুয়েট ছাত্রী। আমার জন্মের আগে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে কারো কাছে দত্তক দিবেন। মা খুব চাচ্ছিলেন আমাকে যারা দত্তক নিবেন তাদের যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী থাকে। তো একজন আইনজীবি এবং তাঁর স্ত্রী আমাকে দত্তক নেওয়ার জন্য রাজি হলো। কিন্তু আমার জন্মের পর তাঁদের মনে হলো তাঁরা আসলে একটা কন্যা শিশু চাচ্ছিলেন।

অতএব আমার বর্তমান বাবা-মা, যারা অপেক্ষমাণ তালিকাতে ছিলেন, গভীর রাতে একটা ফোন পেলেন - "আমাদের একটা অপ্রত্যাশিত ছেলে শিশু আছে, আপনারা ওকে নিতে চান?" "অবশ্যই!" - আমার বাবা-মা'র তড়িৎ উত্তর। আমার আসল মা পরে জানতে পেরেছিলেন যে আমার নতুন মা কখনো বিশ্ববিদ্যালয় আর নতুন বাবা কখনো হাই স্কুলের গন্ডি পেরোননি। তিনি দত্তক নেবার কাগজপত্র সই করতে রাজী হননি। কয়েক মাস পরে অবশ্য তিনি রাজী হয়েছিলেন, আমার নতুন বাবা-মা এই প্রতিজ্ঞা করার পর যে তারা একদিন আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন।

১৭ বছর পর আমি সত্যি সত্যি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি বোকার মতো প্রায় স্ট্যানফোর্ডের সমান খরচের একটা বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিয়েছিলাম। এবং আমার নিম্ন মধ্যবিত্ত পিতামাতার সব জমানো টাকা আমার পড়ালেখার খরচের পেছনে চলে যাচ্ছিলো। ছয় মাস এভাবে যাওয়ার পর আমি এর কোন মানে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। জীবনে কী করতে চাই সে ব্যাপারে আমার তখনো কোন ধারণা ছিলোনা, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা এ ব্যাপারে কিভাবে সাহায্য করবে সেটাও আমি বুঝতে পারছিলাম না। অথচ আমি আমার বাব-মা'র সারা জীবনের জমানো সব টাকা এর পেছনে দিয়ে দিচ্ছিলাম। তাই আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং আশা করলাম যে সবকিছু আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। ওই সময়ের প্রেক্ষিতে এটা একটা ভয়াবহ সিদ্ধান্ত মনে হতে পারে, কিন্তু এখন পেছন ফিরে তাকালে মনে হয় এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত ছিলো। যেই মুহুর্তে আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিলাম সেই মুহুর্ত থেকে আমি আমার অপছন্দের অথচ ডিগ্রীর জন্য দরকারী কোর্সগুলো নেওয়া বন্ধ করে দিতে পারলাম, এবং আমার পছন্দের কোর্সগুলো নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়ে গেলো।

অবশ্য ব্যাপারটি অতোটা সুখকর ছিলোনা। ছাত্রহলে আমার কোন রুম ছিলোনা, তাই আমি আমার বন্ধুদের রুমে ফ্লোরে ঘুমাতাম। ব্যবহৃত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে আমি পাঁচ সেন্ট করে পেতাম (প্রতি বোতল) যেটা দিয়ে আমি আমার খাবার কিনতাম। প্রতি রবিবার আমি সাত মাইল হেঁটে শহরের অপর প্রান্তে অবস্থিত হরে কৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম শুধুমাত্র একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি এটাকে পছন্দ করতাম। আমার কৌতুহল এবং ইনটুইশন অনুসরণ করে আমার জীবনে আমি যতোকিছু করেছি পরবর্তীতে সেটাই আমার কাছে মহামূল্যবান হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। একটা উদাহরণ দিইঃ

সেই সময় রীড কলেজ সম্ভবত দেশের সেরা ক্যালিগ্রাফী কোর্সগুলো করাতো। ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটি পোস্টার, প্রতিটি লেবেল করা হতো হাতে করা ক্যালিগ্রাফী দিয়ে। যেহেতু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম না, তাই আমি যেকোনো কোর্স নিতে পারতাম। তাই ভাবলাম ক্যালিগ্রাফী কোর্স নিয়ে ক্যালিগ্রাফী শিখবো। আমি সেরিফ এবং স্যান সেরিফ টাইপফেইস শিখলাম, বিভিন্ন অক্ষরের মধ্যে স্পেস কমানো বাড়ানো শিখলাম, ভালো টাইপোগ্রাফী কিভাবে করতে হয় সেটা শিখলাম। ব্যাপারটা ছিলো দারুণ সুন্দর, ঐতিহাসিক, বিজ্ঞানের ধরাছোঁয়ার বাইরের একটা আর্ট। এবং এটা আমাকে বেশ আকর্ষণ করতো।

এই ক্যালিগ্রাফী জিনিসটা কখনো কোনো কাজে আসবে এটা আমি কখনো ভাবিনি। কিন্তু, দশ বছর পর যখন আমরা আমাদের প্রথম ম্যাকিন্টস কম্পিউটার ডিজাইন করি তখন এর পুরো ব্যাপারটাই আমাদের কাজে লেগেছিলো। ম্যাক কম্পিটার টাইপোগ্রাফী সমৃদ্ধ প্রথম কম্পিটার। আমি যদি দশ বছর আগে সেই ক্যালিগ্রাফী কোর্সটা না নিতাম তাহলে ম্যাক কম্পিউটারে কখনো মাল্টিপল টাইপফেইস এবং আনুপাতিক দুরত্মের ফন্ট থাকতো না। আর যেহেতু উইন্ডোজ ম্যাক এর এই ফন্ট নকল করেছে, বলা যায় কোনো কম্পিউটারেই এই ধরণের ফন্ট থাকতো না। আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয় না ছাড়তাম তাহলে আমি কখনোই ওই ক্যালিগ্রাফী কোর্সে ভর্তি হতাম না, এবং কম্পিউটারে হয়তো কখনো এতো সুন্দর ফন্ট থাকতো না। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় এই সব বিচ্ছিন্ন ঘটোনাগুলোকে এক সুতোয় বাঁধা অসম্ভব ছিলো, কিন্তু দশ বছর পর সবকিছু একেবারে পরিস্কার বোঝা গিয়েছিলো!

তুমি কখনোই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে এক সূতায় বাঁধতে পারবেনা। এটা শুধুমাত্র পেছনে তাকিয়েই সম্ভব। অতএব, তোমাকে বিশ্বাস করতেই হবে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো একসময় একটা ভালো পরিণামের দিকে যাবে ভবিষ্যতে। তোমাকে কিছু না কিছুর উপর বিশ্বাস করতেই হবে - তোমার মন, ভাগ্য, জীবন, কর্ম, কিছু একটা। এই বিশ্বাস আমাকে কখনোই ব্যর্থ করে দেয়নি, বরং আমার জীবনের সব বড় অর্জনে বিশাল ভুমিকা রেখছে।

আমার দ্বিতীয় গল্পটি ভালোবাসা আর হারানো নিয়ে।

আমি সৌভাগ্যবান ছিলাম। আমি আমার জীবনের প্রথম দিকেই আমার ভালোবাসার কাজ খুঁজে পেয়েছিলাম। ওজ আর আমি আমার বাবা-মা'র বাড়ির গারাজে অ্যাপল কম্পানী শুরু করেছিলাম। তখন আমার বয়স ছিলো ২০ বছর।

আমরা কঠিন পরিশ্রম করেছিলাম - ১০ বছরের মাথায় অ্যাপল কম্পিউটার গারাজের ২ জনের কম্পানী থেকে ৪০০০ এম্পলয়ীর ২ বিলিয়ন ডলারের কম্পানীতে পরিণত হয়। আমার বয়স যখন ৩০ হয় তার অল্প কিছুদিন আগে আমরা আমাদের সেরা কম্পিউটার - ম্যাকিন্টস - বাজারে ছাড়ি। আর ঠিক তখনি আমার চাকরি চলে যায়। কিভাবে একজন তার নিজের প্রতিষ্ঠিত কম্পানী থেকে চাকরিচ্যুত হয়? ব্যাপারটি এমনঃ অ্যাপল যখন অনেক বড়ো হতে লাগলো তখন আমি কম্পানীটি খুব ভালোভাবে চালাতে পারবে এমন একজনকে নিয়োগ দিলাম। প্রথম বছর সবকিছু ভালোভাবেই গেলো। কিন্তু এরপর তার সাথে আমার চিন্তাভাবনার বিভাজন স্পষ্ট হওয়া শুরু হলো। এবং পরিচালনা পর্ষদ তার পক্ষ নিলো। অতএব, ৩০ বছর বয়সে আমি কম্পানী থেকে আউট হয়ে গেলাম। এবং খুব ভালোভাবে আউট হলাম। আমার সারা জীবনের স্বপ্ন এক নিমিষে আমার হাতছাড়া হয়ে গেলো। ঘটনাটা আমাকে বেশ ভেঙ্গে দিয়েছিলো।

এরপরের কয়েক মাস আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি কী করবো। আমার মনে হচ্ছিলো আমি আগের প্রজন্মের উদ্যোগতাদের মনোবল ভেঙ্গে দিয়েছি - আমার হাতে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেটা আমি করতে পারিনি। আমি ডেভিড প্যাকার্ড এবং বব নয়েস এর সাথে দেখা করে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইলাম। একবার ভাবলাম ভ্যালী ছেড়ে পালিয়ে যাই। কিন্তু ধীরে ধীরে আমি একটা ব্যাপার অনুভব করতে লাগলাম - আমি আমার কাজকে এখনো ভালোবাসি! এপলের ঘটনাগুলি সেই সত্যকে এতোটুকু বদলাতে পারেনি। আমাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, কিন্তু আমি এখনো আমার কাজকে ভালোবাসি। তাই আমি আবার একেবারে গোড়া থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

প্রথমে এটা তেমন মনে হয়নি, কিন্তু পরে আবিষ্কার করলাম অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুত হওয়াটা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো ঘটনা। সফল হবার ভার চলে যেয়ে আমি তখন নতুন করে শুরু করলাম। কোন চাপ নেই, সবকিছু সম্পর্কে আগের চেয়ে কম নিশ্চিত। ভারমুক্ত হয়ে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল সময়ে যাত্রা শুরু করলাম।

পরবর্তী পাঁচ বছরে আমি নেক্সট এবং পিক্সার নামে দুটো কম্পানী শুরু করি, আর প্রেমে পড়ি এক অসাধারণ মেয়ের যাকে আমি পরে বিয়ে করি। পিক্সার থেকে আমরা পৃথিবীর প্রথম এনিমেশন ছবি "টয় স্টোরী" তৈরি করি। পিক্সার বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল এনিমেশন স্টুডিও। এরপর ঘটে কিছু চমকপ্রদ ঘটনা। অ্যাপল নেক্সটকে কিনে নেয় এবং আমি অ্যাপলএ ফিরে আসি। এবং নেক্সটএ আমরা যে প্রযুক্তি তৈরি করি সেটা এখন অ্যাপল এর বর্তমান ব্যবসার একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে। অন্যদিকে লরেন আর আমি মিলে তৈরি করি একটা সুখী পরিবার।

আমি মোটামুটি নিশ্চিত এগুলোর কিছুই ঘটতো না যদি না আমি অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুত হতাম। এটা ছিলো খুব তেতো একটা ওষুধ আমার জন্য, কিন্তু আমার মনে হয় রোগীর সেটা দরকার ছিলো। কখনো কখনো জীবন তোমাকে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে। তখন বিশ্বাস হারাইওনা। আমি নিশ্চিত যে জিনিসটা আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো সেটা হচ্ছে - আমি আমার কাজকে ভালোবাসতাম। তোমাকে অবশ্যই তোমার ভালবাসার কাজটি খুঁজে পেতে হবে। তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে যেভাবে তোমার খুঁজে পেতে হয়, ভালোবাসার কাজটিকেও তোমার সেভাবে খুঁজে পেতে হবে। তোমার জীবনের একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকবে তোমার কাজ, তাই জীবন নিয়ে সন্তুস্ট হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে চমৎকার কোনো কাজ করা। আর কোনো কাজ তখনি চমৎকার হবে যখন তুমি তোমার কাজকে ভালোবাসবে। যদি এখনো তোমার ভালোবাসার কাজ খুঁজে না পাও তাহলে খুঁজতে থাকো। অন্য কোথাও স্থায়ী হয়ে যেওনা। তোমার মন আর সব জিনিসের মতোই তোমাকে জানিয়ে দিবে যখন তুমি তোমার ভালোবাসার কাজটি খুঁজে পাবে। যে কোনো সম্পর্কের মতোই, তোমার কাজটি যতো সময় যাবে ততোই ভালো লাগবে। সুতরাং খুঁজতে থাকো যতক্ষন না ভালোবাসার কাজটি পাচ্ছো। অন্য কোন কাজে স্থায়ী হয়ো না।

আমার শেষ গল্পটি মৃত্যু নিয়ে।

আমার বয়স যখন ১৭ ছিলো তখন আমি একটা উদ্ধৃতি পড়েছিলামঃ "তুমি যদি প্রতিটি দিন এটা ভেবে পার কর যে আজই তোমার জীবনের শেষ দিন, তাহলে একদিন তুমি সত্যি সঠিক হবে"। এই লাইনটা আমার মনে গভীর রেখাপাত করেছিলো, এবং সেই থেকে গতো ৩৩ বছর আমি প্রতিদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করি - "আজ যদি আমার জীবনের শেষ দিন হতো তাহলে আমি কি যা যা করতে যাচ্ছি আজ তাই করতাম, নাকি অন্য কিছু করতাম?" যখনি এই প্রশ্নের উত্তর "না" হতো পরপর বেশ কিছু দিন, আমি জানতাম আমার কিছু একটা পরিবর্তন করতে হবে।

"আমি একদিন মরে যাবো" - এই কথাটা মাথায় রাখা আমার জীবনে আমাকে বড় বড় সব সিদ্ধান্ত নিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। কারণ সবকিছু - সকল আশা-প্রত্যাশা, গর্ব, ব্যর্থতার ভয় বা লজ্জা - এইসব কিছু মৃত্যুর মুখে নাই হয়ে যায়, শুধুমাত্র সত্যিকারের গুরুত্মপূর্ণ জিনিসগুলোই টিকে থাকে। তোমার কিছু হারানোর আছে এই চিন্তা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে এটা মনে রাখা যে একদিন তুমি মরে যাবে। তুমি নগ্ন হয়েই আছো।

অতএব নিজের মনকে না শোনার কোনো কারণই নাই।

প্রায় এক বছর আগে আমার ক্যান্সার ধরা পড়ে। সকাল ৭:৩০ এ আমার একটা স্ক্যান হয় এবং এতে পরিস্কারভাবে আমার প্যানক্রিয়াসএ একটা টিউমার দেখা যায়। আমি তখনো জানতাম না প্যানক্রিয়াস জিনিসটা কী। আমার ডাক্তাররা বললেন এই ক্যান্সার প্রায় নিশ্চিতভাবে অনারোগ্য, এবং আমার আয়ু আর তিন থেকে ছয় মাস আছে। আমার ডাক্তার আমাকে বাসায় ফিরে যেয়ে সব ঠিকঠাক করতে বললেন। সোজা কথায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়া।

এরমানে হচ্ছে তুমি তোমার সন্তানদের আগামী দশ বছরে যা বলবে বলে ঠিক করেছো তা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বলতে হবে। এরমানে হচ্ছে সবকিছু গোছগাছ করে রাখা যাতে তোমার পরিবারের সবার জন্য ব্যাপারটি যথাসম্ভব কম বেদনাদায়ক হয়। এরমানে হচ্ছে সবার থেকে বিদায় নিয়ে নেওয়া।

এভাবে সেদিন সারাদিন গেলো। সেদিন সন্ধ্যায় আমার একটা বায়োপসি হলো। তারা আমার গলার ভেতর দিয়ে একটা এন্ডোস্কোপ নামিয়ে দিলো, এরপর আমার পেটের ভেতর দিয়ে যেয়ে আমার ইনটেস্টাইন থেকে সুঁই দিয়ে কিছু কোষ নিয়ে আসলো। আমাকে অজ্ঞান করে রেখেছিলো তাই আমি কিছুই দেখিনি। কিন্তু আমার স্ত্রী পরে আমাকে বলেছিলো যে আমার ডাক্তাররা যখন এন্ডোস্কোপি থেকে পাওয়া কোষগুলি মাইক্রোস্কোপ এর নিচে রেখে পরীক্ষা করা শুরু করলো তখন তারা প্রায় কাঁদতে শুরু করেছিলো, কারণ আমার যে ধরণের প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার হয়েছিলো সেটার আসলে সার্জারীর মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। আমার সেই সার্জারী হয়েছিলো এবং এখন আমি সুস্থ্য।

এটাই আমার মৃত্যুর সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়া, এবং আমি আশা করি আরো কয়েক দশকের জন্যও এটা তাই যেনো হয়। মৃত্যুর খুব কাছাকাছি যাওয়ার এই বাস্তব অভিজ্ঞতার কারণে মৃত্যু সম্পর্কে এখন আমি অনেক বেশি জানি, যেটা আমি জানতাম না যদি না এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে না যেতামঃ

কেউই মরতে চায় না। এমনকি যারা বেহেশতে যেতে চায়, তারাও সেখানে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি মরে যেতে চায় না। কিন্তু এরপরও মৃত্যুই আমাদের সবার গন্তব্য। কেউই কখনো এটা থেকে পালাতে পারেনি। এবং সেটাই হওয়া উচিৎ, কারণ মৃত্যু সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে বড় আবিস্কার। এটা জীবনের পরিবর্তনের এজেন্ট। মৃত্যু পুরনোকে ধুয়ে মুছে নতুনের জন্য জায়গা করে দেয়। এই মুহুর্তে তোমরা হচ্ছো নতুন, কিন্তু খুব বেশিদিন দূরে নয় যেদিন তোমরা পুরনো হয়ে যাবে এবং তোমাদেরও ধুয়ে মুছে ফেলা হবে। নাটকীয়ভাবে বলার জন্য দুঃখিত, কিন্তু এটা খুবই সত্যি।

তোমাদের সময় সীমিত, অতএব, অন্য কারো জীবন যাপন করে সময় নষ্ট করো না। কোনো মতবাদের ফাঁদে পড়ো না, অর্থ্যাৎ অন্য কারো চিন্তা-ভাবনা দিয়ে নিজের জীবন চালিয়ো না। তোমার নিজের ভেতরের কন্ঠকে অন্যদের চিন্তা-ভাবনার কাছে আটকাতে দিও না। আর সবচেয়ে বড় কথাঃ নিজের মন আর ইনটুইশন এর কথা শোনার সাহস রাখবে। ওরা ঠিকই জানে তুমি আসলে কি হতে চাও। বাকী সব কিছু ততোটা গুরুত্মপূর্ণ নয়।

আমি যখন তরুণ ছিলাম তখন একটা পত্রিকা বের হতো যার নাম ছিলো "The Whole Earth Catalog" (সারা পৃথিবীর ক্যাটালগ). এটা ছিলো আমার প্রজন্মের একটা বাইবেল। এটা বের করেছিলেন স্টুয়ার্ড ব্র্যান্ড নামে এক ভদ্রলোক যিনি মেনলো পার্কের কাছেই থাকতেন। তিনি পত্রিকাটিকে কাব্যময়তা দিয়ে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। এটা ছিলো ষাট এর দশকের শেষ দিককার কথা - কম্পিউটার এবং ডেস্কটপ পাবলিশিং তখনো শুরু হয়নি। তাই পত্রিকাটি বানানো হতো টাইপরাইটার, কাঁচি, এবং পোলারয়েড ক্যামেরা দিয়ে। পত্রিকাটিকে ৩৫ বছর আগের পেপারব্যাক গুগল বলা যায়ঃ অনেক তত্ত্ব-তথ্যে সমৃদ্ধ আর মহৎ উদ্দেশ্যে নিবেদিত।

স্টুয়ার্ট এবং তার টিম পত্রিকাটির অনেকগুলি সংখ্যা বের করেছিলো। পত্রিকাটির জীবন শেষ হয় একটা সমাপ্তি সংখ্যা দিয়ে। এটা ছিলো সত্তর এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, আমার বয়স ছিলো তোমাদের বয়সের কাছাকাছি। সমাপ্তি সংখ্যার শেষ পাতায় একটা ভোরের ছবি ছিলো। তার নিচে ছিলো এই কথাগুলিঃ "ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো"। এটা ছিলো তাদের বিদায় বার্তা। ক্ষুধার্ত থেকো। বোকা থেকো। এবং আমি নিজেও সবসময় এটা মেনে চলার চেষ্টা করে এসেছি। এবং আজ তোমরা যখন পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি ছেড়ে আরো বড় জীবনের গন্ডিতে প্রবেশ করছো, আমি তোমাদেরকেও এটা মেনে চলার আহবান জানাচ্ছি।

ক্ষুধার্ত থেকো। বোকা থেকো।

সবাইকে ধন্যবাদ।

অনুবাদ ::
বিলাশ বিডি



আষাঢ় গগনে

দেবীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

আষাঢ় গগনে আজ
ভাসে মেঘদূত রাজ

আকাশে ঘনায় আঁধার,
পড়ে জল ঝিমঝিম ,
রিমঝিম জুঁই ঝরে

নেই ওই নিঠুর খরা,
ঝরে পড়ে অবিরাম ধারা
হয়েছে হৃদয় তৃপ্তিভরা,
মেঘেরা পেয়েছে ছাড়া

আবার আকাশে ঘনায় কালো,
উতল হল মন ,
সূর্য্য কোথা লুকালো

বহে ওই বহ্নি সমীরণ ,
ঝরে আজ মাটিতে বকুল,
হৃদয় হল আকুল

বর্ষায় কুহরিত হল ধ্বনি
ওড়ে ওই যত শালিখ ,
ডাকে বাগে ওই কোকিল,
মাতল সে আনন্দে , আনন্দে

৯ এপ্রিল ২০০৮

আজ পহেলা আষাঢ়

আজি আষাঢ়ে-
গাছে ফুটেছে কদম ফুল
ময়ুর মেলেছে পেখম
রিমঝিম বুষ্টিতে
চারিধার অথৈ থৈ থৈ

আজি আষাঢ়ে-
সবুজের প্রান্তরে রুপ-রঙের
লাগিয়াছে মেলা

আজি আষাঢ়ে-
মন আমার ঝর ঝর বাজে...........

"আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে,
আসে বৃস্টির সুবাস বাতাস বেয়ে
এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি
নুতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে..."


আষাঢ়

নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর,
আউশের ক্ষেত জলে ভরভর,
কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিছে দেখ্ চাহি রে
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।।

ওই ডাকে শোনো ধেনু ঘনঘন, ধবলীরে আনো গোহালে
এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে
দুয়ারে দাঁড়ায়ে ওগো দেখ্ দেখি
মাঠে গেছে যারা তারা ফিরিছে কি,
রাখালবালক কী জানি কোথায় সারা দিন আজি খোয়ালে
এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে।।

শোনো শোনো ওই পারে যাবে বলে কে ডাকিছে বুঝি মাঝিরে
খেয়া-পারাপার বন্ধ হয়েছে আজি রে
পুবে হাওয়া বয়, কূলে নেই কেউ,
দু কূল বাহিয়া উঠে পড়ে ঢেউ,
দরদর বেগে জলে পড়ি জল ছলছল উঠে বাজি রে
খেয়া-পারাপার বন্ধ হয়েছে আজি রে।।

ওগো, আজ তোরা যাস নে গো, তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে
আকাশ আঁধার, বেলা বেশি আর নাহি রে
ঝরঝর ধারে ভিজিবে নিচোল,
ঘাটে যেতে পথ হয়েছে পিছল,
ওই বেণুবন দুলে ঘনঘন পথপাশে দেখ্ চাহি রে
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।।

- কবিগুরু, শিলাইদহ
২০ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৭


আজ আষাঢ়ের প্রথম দিনঝর ঝর করে অঝোরে ঝরে বর্ষা এলো

বর্ষার এক পশলা বৃস্টিকে জানালায় হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করতে করতে অথবা টিনের চালে অনবরত বর্ষণের গুঞ্জনে কান পেতে ছন্দ খুঁজতে খুঁজতে জীবন ও প্রকৃতি মিশে যায় চলমান সময়ের হাত ধরেবর্ষা আনে সবুজআনে প্রাণআনে ফসলআনে ধ্বংসআনে তান্ডবতারপর একসময়ের বর্ষায় থমকে যাওয়া মানুষগুলোর প্লাবিত জীবনধারা আবারও ঘুরে দাঁড়ায় নতুন সৃস্টির প্রতিজ্ঞায়আবার নতুন করে গড়ে উঠে জনপদবর্ষা আমাদের মানুষগুলোকে বেপরোয়া করে তোলে, তাদের জীবন সংগ্রামে যোগ করে সৃস্টিশীলতা, নিয়ে আসে নতুন প্রাণের উদ্দীপনা এভাবেই চলছে চিরায়ত বাংলার বর্ষাবরণপ্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলে আমাদের জীবনএখানেই আনন্দ, এখানে সাফল্যবর্ষাকে দু' হাত বাড়িয়ে বরণ করতে গিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্ঠে বেজে উঠে:

"আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে,
আসে বৃস্টির সুবাস বাতাস বেয়ে
এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি
নুতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে..."

১৮৫২ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার নবাগত জনসমষ্টির স্থান সংকুলানের জন্য ইন্ডিয়ানদের কাছ থেকে জমি কিনতে চেয়ে চিঠি দেন। উত্তরে সর্দার সিয়াটল যে চিঠি লিখেছিলেন তা নিচে দেয়া হলো-

" ওয়াশিংটন থেকে প্রেসিডেন্ট সাহেব জানিয়েছেন যে তিনি আমাদের জমিজিরাত কিনতে চান। কিন্তু আকাশ কি কেনাবেচা করা যায়? যায় জমি কেনাবেচা করা? আমাদের কাছে এই ধারনা খুব অদ্ভূত মনে হচ্ছে। বাতাসের সজীবতা, জলের স্বচ্ছতা তো আমাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। তাহলে? কী করে কিনবেন তাদের?

" এই ধরিত্রীর ধূলিকনা আমার লোকদের কাছে পবিত্র। প্রতিটি পাইন গাছের পাতা, প্রতিটি বালুকণা, ঘনান্ধকার অরণ্যের প্রতিটি শিশিরকণা, প্রতিটি মাঠ, প্রতিটি গুন্জরিত পতঙ্গ। আমার লোকেদের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতায় এরা সবাই খুব পবিত্র।

" গাছ রস টেনে নেয় গোপন পথে-আমরা তা জানি, যেমন জানি রক্ত আমাদের ধমনী বেয়ে চলে। আমরা এই ভূলোকের অংশ যেমন এই ভূলোক আমাদের অংশ। সুরভিত ফুলেরা আমাদের বোন। ভালুক, হরিণ, রাজকীয় ঈগল-এরা সবাই আমাদের সহোদর ভাই। পাহাড়ের চূড়া, সবুজ প্রান্তরের রস, ঘোড়ার শরীরের ওম, আর মানুষ সবাই আমরা একই পরিবারের সদস্য।

" ঝরণায়, নদীতে স্ফটিক-স্কচ্ছ যে জল গড়িয়ে যায় সে তো নেহায়েত জল নয়, আমাদের প্রপিতাদের দেহের স্বেদ, রক্ত। আমরা যদি আপনাকে জমি বিক্রি করি তো অবশ্যই স্মরণ রাখবেন যে জমিটা পবিত্র। ঝিলের স্বচ্ছ জলে অলৌকিক ছায়া পড়ে। তার প্রতিটিতে আমাদের লোকদের জীবনের স্মৃতি আর ঘটনা বিম্বিত হয়। বনের মর্মরধ্বনিতে আমি আমার পিতামহের ডাক শুনতে পাই।

" নদীরা আমাদের ভাই। তাদের জলে আমাদের তৃষ্ণা মেটে। ওরা আমাদের নৌকা বয়ে নেয়, আমাদের সন্তানদের মুখের গ্রাস জোগায়। অতএব, আপনি অবশ্যই নদীকে সেই রকম দয়াদাক্ষিণ্য করবেন যেমনটি করবেন আপনার ভাইকে।

" আমরা যদি জমি বিক্রি করি তো মনে রাখবেন যে সেই জমির ওপর প্রবাহিত বাতাস আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। হাওয়া তার উদ্যমের অংশ দান করে তার সমস্ত পোষাকে। হাওয়া যেমন প্রথম ফুৎকারে আমাদের প্রপিতামহদের ফুসফুসে দিয়েছে দম, তেমনি গ্রহন করেছে তার অন্তিম শ্বাসবায়ুও। আমাদের শিশুদেরও বাতাস দেয় জীবনের উদ্যম। অতএব আপনাকে জমি বিক্রি করলে আপনি অবশ্যই সেই জমি বিশেষ যত্ন করে রাখবেন যেন সেখানে লোকে মাঠের ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ পাওয়ার লোভে সমবেত হয়।

" আমাদের সন্ততিদের আমরা যা শিখিয়েছি, আপনারাও কি আপনাদের সন্ততিদের তা-ই শেখাবেন? আমরা শিখিয়েছি এই ধরনী আমাদের মা। এই ধরনীর কিছু হলে এর সন্তানদের সবার তা হবে।

" আমরা এটুকু জানি: মাটি মানুষের নয়, বরং মানুষই মাটির। রক্ত যেমন আমাদের একত্রে বেঁধেছে, তেমনি সমস্ত জিনিসও পরস্পরে বাঁধা। জীবনের জাল মানুষ বয়ন করেনি। সেতো জালে কেবল বাঁধা। এই জালের ক্ষতি মানে তার নিজেই ক্ষতি।

" আপনাদের ভবিষ্যৎ আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হয়। গরু-ঘোড়া সব জবাই করলে কি হবে অবস্থাটা? বুনো ঘোড়া ফোষ মানিয়ে চালাবেন? অরণ্যের গোপন জায়গাগুলো যখন মানুষের ঘামের গন্ধে উঠবে ভরে, এবং উচুঁ পাহাড়ের চুড়া আলাপি তারের আড়ালে পড়বে ঢাকা, তখন কি হবে? ঝোপঝাড়, বন বাদাড় যাবে কোথায়? উধাও উধাও। আর ক্ষিপ্রগতি টাট্ট্ুঘোড়া আর শিকারকে অকালে বিদায় জানাতে হলে কেমন হয় ব্যাপারটা? তখন ফুটে উঠবে জীবনের অন্তিম দশা এবং শুরু হবে ধুঁকে ধুঁকে জীবন পথে চলা।

" যখন একেবারে শেষ মানুষটিও তার নিধুয়া দিগন্তে পাড়ে হাওয়া হয়ে গেছে, এবং তার স্মৃতি কেবল ভাসমান মেঘের মতো প্রেইরির পাথারে থেকে থেকে ছায়াসম্পাত করে বেড়াচ্ছে, তখনো কি এই সমুদ্রতট, এই অরণ্যরাজি থাকবে, যেমন আজো আছে? তখনো কি আমার লোকেদের আত্না মিশে থাকবে এদের আনাচে কানাচে?

" নবজাতক যেমন তার মায়ের হ্দস্পন্দন ভালোবাসে, তেমনি আমরা ভালোবাসি এই পৃথিবীটাকে। অতএব আমরা জমি বিক্রি করলে আপনিও একে আমাদের মতোই ভালোবাসবেন। আমরা এর যেমন যত্ন নিয়েছি, আপনাকেও সে রকম যত্ন নিতে বলি। জমি সম্প্রাদনের অবিকল স্মৃতি মনে ধরে রাখুন। সমস্ত সন্তানের জন্য জমি রক্ষা করুন, জমিকে ভালোবাসুন যেমন ঈশ্বর আমাদের ভালোবাসেন।

" আমরা যেহেতু সবাই ভূমির অংশ, সে জন্য আপনিও এর অংশ। জমি আমাদের কাছে মূল্যবান, তেমনি আপনার কাছেও। একটা বিষয়ে আমরা নিশ্চিত: ঈশ্বর এক। মানুষ-সে লালই হোক আর সাদাই হোক, কখনো সে অন্য থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না; হাজার হলেও আমরা তো পরস্পর ভাই।

উৎস:
জোসেফ ক্যাম্পবেলের মিথচিন্তা
ভাষান্তর: খালিকুজ্জামান ইলিয়াস

মূল পোস্ট





মা দিবসে মায়ের জন্য প্রাতরাশ বানাতে গিয়ে ২ শিশু তাদের রান্না ঘড়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।

ঠিক সকালের দিকে মা বিছানায় থাকা অবস্থায় একটা শব্দে জেগে উঠ'ল... শব্দের উৎপত্তি স্থল ছিল কিচেন... যেখান তার দুই সন্তান প্রাতরাশের আয়োজনে ব্যস্ত মায়ের অগোচরেই... মা দিবসে মাকে আসলে আজকে সারপ্রাইজ করার জন্য তাদের একটা প্লান ছিল এটা। ঘটনাটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার Lower Templestowe এ।

ঘটনাটা ঘটেছিল যেভাবে... বাচ্চারা ফ্লাশ পেনে ব্রেকফাস্ট বানাতে ছিল ... হঠাৎ ফ্লাশ পেনের উপর আগুন উঠে যায়.. যেখান থেকে আগুন ছড়ায় কাপবোর্ডে... মায়ের কান হয়ে দ্রুত আগুনের সংবাদ অগ্নি নির্বাপক দলের কাছে পৌঁছায়। দ্রুত ঘটনাস্থলে অগ্নি নির্বাপক দল ঘটনস্থলে পৌঁছলে আগুন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। বাবা অগ্নিদগ্ধ হয় এবং মেয়েরা ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে অসুস্থ হয়ে পরে। বাবা এবং তাদের দু'সন্তান এখন হসপিটালাইজড।


সংবাদটা পড়েই ভাল লাগল একটা জায়গায় ... মায়ের জন্য ভালবাসা। মায়ের প্রতিদিনের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘবের আপ্রাণ চেষ্টা ছিল এই দিনটাতে ... যেখানে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন কোন চিন্তা ওই ছোট্ট শিশু দুটার মাথায় ছিল না। দুই সন্তান তার মাকে একটা সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য কিচেনে ঢুকে প্রাতরাশ তৈরি করছে... মা ঘুম থেকে জাগলে তার বেডের সামনে নিয়ে মাকে বলবে "মা তোমার জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়েছি..." বিষয়টা আসলেই অনেক সুইট ছিল ... ভাবতেই চোখে পানি চলে আসে...

গতকাল ছোট ভাই শাতীল একটা লিংকু পাঠালো ম্যাসেঞ্জারে... সাথে এটাও বললো "যাইয়া একটা চড় মাইরা আসেন"... পড়লাম... চড় মারার কথা মাথায় এলো না... ভাবলাম আমরাতো এইটুকুও করি না... ওদের যেই ভাবনাটি ছিল ... আমারা বড়রা তো সেভাবে ভাবি না
:(



একটা চেইন মেইল ... যার বক্তব্য এরম...

কোন এক বাদল দিনে... বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি... কাক ভেজা হয়ে বাসায় ফিরছি... ছোট ভাইটা দেইখাই কইলো সকালে বের হওয়ার সময় ছাতাটা সাথে নিলে তো এরম ভিজন লাগতো না... বোনটা উপদেশ ঝাড়ল “বৃষ্টি থামার পর বাসায় আসলে তো এরম কাক ভেজা হতে হতো না”। আর ওইদিকে বাপজান রাইগা আমারে কতক্ষণ ধমকাইয়া কইলো যে, “যখন জ্বর-জারি আইবো তখন বুঝবা ঠেলা”।

কিন্তু আমার মা জননী? কোন কথাই বললো না... দ্রুত কাছে এসে আঁচলটা দিয়ে মাথাটা মুছে দিচ্ছিল আর বলতে ছিলা হারামজাদা বৃষ্টি... একটু পরে আসলে কি হৈত? আমার বাবাটা বাসায় পৌঁছার পর আসলে কি খুব সমস্যা হতো?

এটাই হলো আমাদের মা




ঠিক সকাল ৯টার মধ্যেই যেভাবেই হোক অফিসের দরজায় কড়া নাড়তে হবেই। ক্ষমাহীন পাষণ্ড কর্মস্থলের কর্পোরেটীয় আচরণ। প্রস্তুতির জন্য নীদ্রাদেবীর সাথে বিমাতীয় ব্যবহার। মায়ের ঘড়ের বাতাস ভারী... সিলিং ফ্যানের যাত্রা বিরতি... কারণ? আমার প্রিয় মা জননীর শরীর ভালো নেই... কোথায় মুড়ান মা আমার শয্যাশায়ী ... কপাল উত্তপ্ত...জেগে উঠেই বললেন “কিছু হয় নাই”... তোর অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে... :( ... কি বলি... এই মায়ের মিথ্যার সাথে আমি পরিচিত... প্রচণ্ড জ্বর নিয়েও বলবে তার কিছুই হয়নি ... আমরা হুদাই চিন্তা করি :(

মা আমার জন্য প্রতিদিন... মা আমরা তোমার জন্য প্রতিদিন... বিশেষ একটি দিনে তুমি আবদ্ধ নও...

ঠিক এরম সময়ে ... গ্রীষ্মের কাঠ ফাটা দিনগুলোতো আম-কাঁঠালের সময়.. স্কুল ছুটি থাকত ... তখন অবশ্য সামার ভ্যাকেশন ছিল না .. ছিল আম-কাঁঠালের বন্ধস্কুল ছুটি মানে নানা বাড়ি যাওয়া অবশ্যম্ভাবী... কোন গাছের কোন আমটা পেকেছে.. সব তখন থাকত নখ দর্পণেআর গাছে চড়লেই টারজান টারজান ভাবও চলে আসতগাছ থেকে ডাল ভেঙ্গে পরার স্মৃতীও ছিল

এমনিতে স্কুলের সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে দুপুরে খাওয়া শেষে আম্মা যখন কানে ধরে বিছানায় পাঠাত ... মন খারাপ করে বিছানায় এপাশ ওপাশ... কখন আম্মার চোখটা বন্ধ হবে... আর ছুটবো টিভির দিকে.... বেলা তিনটার চল্লিশ (সম্ভবত) এ শুরু হতো টারজানসাউন্ড কমিয়ে বোবা ছবি দেখতাম... প্রতিটা ঘটনা... পরের ঘটনা... গাছের ডালে দরি ঝুলিয়ে টারজান হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা ... পুকুরের ঘাটলা থেকে টারজানের চিৎকার দিয়ে জাম্প দিয়ে পড়া ... সব কিছুই অনুকরণের চেষ্টা চলত

পরবর্তী সময়ের আরো কিছু কার্টুন জনপ্রিয় ছিলথান্ডার ক্যাটস, নিনজা টার্টেল স্পেল বাইন্ডার, থ্রি স্টুজেস, গার্ল ফ্রম টুমোরো, কজবি শো, সহ বেশি কিছু কিডজ শো

সেই আমলে বাড়ির বড়দের মুখে মুখে আলোচিত হতো সকাল সন্ধ্যা এবং ঢাকায় থাকি সিরিয়াল

সকাল সন্ধ্যা একটি বাংলা ধারাবাহিক নাটকের নাম১৯৮০-র দশকের শুরুতে এটি বিটিভি-তে সম্প্রচার হয়প্রধান চরিত্রে ছিলেন পীযুষ বন্দোপাধ্যায় এবং আফরোজা বানু তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক। - বাংলা ইউকিপিডিয়া

এর পরের সময়গুলোতে আরো অনেক নাটক বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়ে ছিল ... বহুব্রীহি, সংশপ্তক, এই সব দিনরাত্রি, কোথাও কেউ নেই, বারো রকমের মানুষ, ইত্যাদিপ্রায় ঈদেই আমজাদ হোসেনের ফানি নাটক জব্বর আলি সিরিজ পাওয়া যেত (সব ঈদে নয়)আনন্দমেলা ছিল ঈদের প্রধান আকর্ষণ এবং যথারীতি নিরানন্দেরতখন এক একটা নাটক ছিল প্রায় এক ঘন্টার আর প্রতি সপ্তাহে নাটক ছিল মাত্র দুটাআর তাই ভাল ভাল নাটকের প্রতিযোগিতা চলত সেই সময়েবর্তমান প্রজন্মের জন্য মায়াই লাগে... তাদের কপালে এইসব আর জুটবে না


সংশপ্তক নাটকে হুমায়ুন ফরিদির এবং ফেরদৌসি মজুমদারের দুর্দান্ত অভিনয়


কোথাও কেউ নেই নাটকে আসাদুজ্জামান নুর সে সময় একটা স্টাইল ক্রিয়েট করেছিলেন... বাইকের চাবিটা একটা চেন এর মাথায় লাগিয়ে হাতের আঙ্গুলে ঘুরানো... যেটা ঢাকার রাস্তায় অনেক কেই দেখা যেতআবার নাটকের শেষ দৃশ্যে তার মৃত্যুর জন্য তো ঢাকা রিতিমত মিছিলএখনো বাকের ভাইয়ের জন্য পুরানা ঢাকায় কুলখানি হয়


আজ রোববার হুমায়ুন আহমেদের আরেকটি ক্রিয়েশনযেখানে তিতলি ভাইয়া, কংকা ভাইয়া... বড় চাচা না কফিনের মধ্যে শুয়ে আছেফানি সব ক্যারেক্টারবহুব্রীহি নাটকটি্ও ফানি নাটক

অয়োময়ের জনপ্রিয়তা আলাদা করে বলার মতআসাদুজ্জামানের অভিনয়ের তুলনা শুধু তিনিই ছিলেন


পরের সময়টায় ... আমরা ছোট পর্দার নায়িকা হিসেবে পাই বিপশা হায়াত.... সমী কায়সার... আর আফসানা মিমিকেবিশেষ করে সমীর ভক্ত ছিলাম ;) ... পরে সমী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে ব্যাপক কষ্ট পাই :( ... বিপাশার একটা ইনোসেন্ট লুক ছিল ... সমীর অভিনয় ছিল দুর্দান্ত ... আর আফসানা মিমি? তাকে দেখলেই মনে হতো স্কুল থেকে ফির'ল মাত্র ;)এদের সমসাময়িক ছিলেন বিজরি বরকতুল্লাহ


বিটিভির দাপুটে অভিনেতাদের মধ্যে প্রথমেই আফজালের ক্রেজ ছিল মেয়ে মহলে ;)... হুমায়ুন আহমেদের দুর্দান্ত অভিনয়ের মাঝেও আসাদুজ্জামান নুরের অবস্থান ছিল স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিততখন মেঘনা নামের একজন টিভি নায়িকা ছিলযিনি এখন আর টিভিতে আসেন নাআর বিশেষ ভাবে ছিলেন সুবর্না মুস্তাফাআলি যাকের .. সারা যাকের... আবুল হায়াত... আবুল খায়ের... পীযুষ... আসাদ ... খালেদ খানদের অভিনয় ছিল সত্যি দেখার মত


এর পর আসে তৌকির একটা এডিক্টেড নাটকের নায়ক হওয়ার সুবাদে তাকে সব সময় তাই মনে হতজাহিদ হাসানতো পুরা মফিজ টাইপ ;) (এটাও নাটকের সুবাদে), আজিজুল হাকিম ছিলেন চিরসবুজ... তার আরো একটি নাম ছিল .. প্যাকেজুল হাকিম ;), শহীদুজ্জামান সেলিমদের যুগ

(
চলবে)


লেখাটি বাধভাঙার আওয়াজে প্রকাশিত